অলিম্পিক গেমস ভারতবর্ষের মানুষের কাছে সেইভাবে গুরুত্ব পায় না৷ কিন্তু ভাবতে অবাক লাগে, হাতে গোনা কয়েকটা দেশ ক্রিকেট খেলে তাদের নিয়ে হইচই করতে কোনও সীমারেখা থাকে না৷ তারপরে ফুটবল খেলা নিয়ে কিছুটা আলোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন ফুটবল ভক্তরা৷ আর আমাদের কাছে যখন ইন্ডিয়ান সুপার লিগ এসে গেল, তখন হয়তো চায়ের টেবিলে টুকরো টুকরো কথা চালাচালি হয়ে থাকে বন্ধুদের মধ্যে৷ কিন্তু এই তো কয়েকদিন আগে শেষ হয়ে গেল প্যারিসে অলিম্পিক গেমস আর প্যারালিম্পিক গেমস৷ সারা বিশ্বের প্রায় সব দেশ অলিম্পিক গেমসে অংশ নিয়ে থাকে৷ লড়াইটা হয় জবরদস্ত৷ প্রতিটা দেশের অ্যাথলিটরা ভাবতে থাকে প্রতিপক্ষকে কীভাবে পরাস্ত করা যায়৷ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে পদক জয়ের অনুভূতিটা একেবারে অন্যরকম৷ কয়েকটা ইভেন্ট ছাড়া একক কৃতিত্বই দেশকে মহান করে তোলে৷ এই দক্ষতাকে অবশ্যই তারিফ করতে হবে৷ সেখানে ক্রিকেট, ফুটবল বা হকিকে বড় জায়গা দেওয়া যাবে না৷ একক দক্ষতার সঙ্গে দলগত দক্ষতাকে একইভাবে তুলনা করা যাবে না৷
ক্রিকেট ও ফুটবলের জন্য যে হারে বিনিয়োগকারী সংস্থা এগিয়ে আসেন, তারা কিন্তু অ্যাথলিটদের জন্যে সেইভাবে আগ্রহ প্রকাশ করে না৷ এমনকী হকির জন্য তারা ব্যস্ততা দেখায় না৷ অলিম্পিক গেমসে হকিতেই ভারতের পরিচয়৷ এখন অন্যান্য দেশ হকিতে বড় ভূমিকা নিয়ে ভারতকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে৷ স্বপ্নের সোনার পদক থেকে অনেক বছর ভারত বঞ্চিত৷ একটা সময় অলিম্পিক গেমস হকিতে ভারতের সোনার পদকটা যেন আগে থেকে তোলা থাকত৷ সেই হকির জন্য ওড়িশা সরকার কিছু ভাবনাচিন্তা করলেও বিনিয়োগকারী সংস্থা নীরবতা পালন করে৷ আর অন্যান্য ইভেন্টের কথা শুনলে মুখ ঘুরিয়ে চলে যান বিনিয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা৷ হয়তো তাঁদের কোনও এলার্জি আছে৷ আসলে সংস্থার কর্মকর্তারা চান মন্ত্রীবাবুদের সঙ্গে ছবি তুলে প্রচারে থাকতে৷ বিনোদনের জন্যে দেদার অর্থ ব্যয় করতে তাদের কোনও সমস্যা দেখা দেয় না— কিন্তু অন্যদের ভাবনায় নৈব নৈব চ৷ তাহলে কীভাবে অন্য ইভেন্টের প্রতিযোগীরা আলোকবর্তিকায় নিজেদের নাম লেখাবেন!
তবে এবারে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসছে অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের পাশে৷ তাঁদের জন্য সরকার প্রশিক্ষণের জন্যে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে৷ এমনকী বিদেশ থেকে কোচ এনে ভারতের মাটিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হোক৷ আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ আবার কোনও কোনও প্রতিযোগীকে বিদেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ তাই এবারে প্যারিস অলিম্পিক গেমসে বেশি পদক জয়ের আশা করা হয়েছিল৷ কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেননি প্রতিযোগীরা৷ ভারতের ঝুলিতে ৬টা পদক এসেছে৷ সোনার পদক অধরা থেকে গেল৷ ভারতবাসী আশা করেছিলেন জ্যাভলিন থ্রোয়ার নীরজ চোপড়া সোনার পদকে উজ্জ্বল হয়ে উঠবেন৷ এই ভাবনাকে সার্থকরূপ দিতে পারলেন না নীরজ, পাকিস্তানের প্রতিনিধির কাছে পরাস্ত হওয়াতে৷ টোকিও অলিম্পিক গেমসে ভারতের স্থান ছিল ৪৮তম৷ আর এবারে ভারত ১টি রুপো ও পাঁচটি ব্রোঞ্জ পদকের দৌলতে ৭৯তম স্থানে নাম লেখালো৷ অর্থাৎ গতবারের থেকে ২৩ ধাপ পিছিয়ে পড়তে হলো ভারতকে৷ তবে আরও কয়েকটি পদক জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছেও এলো না, প্রতিযোগীরা চতুর্থ স্থানে লড়াই শেষ করায়৷ তবে, আশার আলো দেখাতে শুরু করেছেন ভারতের প্রতিনিধিরা৷
আবার প্যারালিম্পিক গেমসে ভারতের প্রতিনিধিরা ২৯টি পদক জিতেছেন৷ অত্যন্ত ভালো বার্তা৷ বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন ৭টি সোনার পদক৷ পেয়েছেন ৯টি রুপো ও ১৩টি ব্রোঞ্জ পদক৷ তবুও তাঁদের জন্যে সেইভাবে অভিনন্দন বার্তা পৌঁছয় না৷ খবরের শিরোনামে তাঁদের জায়গা হয় না৷ ভারতের গৌরব প্রতিষ্ঠিত করলেন আন্তজাতিক মঞ্চে৷ তাঁদের এখনও শুনতে হয় বিদ্রূপের কথা৷ অবহেলায় অন্য চোখে দেখা৷ স্বীকৃতিকে সেইভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না৷ তবুও তাঁরা পরিশ্রম ও অনুশীলনের মধ্য দিয়ে ভারতের জাতীয় পতাকাকে তুলে ধরবেন আন্তর্জাতিক ক্রীড়ামঞ্চে৷ তবে অলিম্পিক গেমসকে যতই অবহেলা করা হোক না কেন, এই প্রতিযোগিতার গুরুত্ব অন্য সব প্রতিযোগিতা থেকে অনেক বেশি৷ কুর্নিশ জানাতেই হবে অলিম্পিক গেমসকে৷